UGB 1ST SEM LC1 BENGALI
LC1 BENGALI SUGGESTION
"পল্লীসমাজ' -নামকরণঃ
গল্পের নামকরণ নানাভাবে হয়ে
থাকে । কখনো গল্পের প্রধান চরিত্রের নাম অনুসারে , কখনো বিষয়বস্তু অনুসারে , কখনো
আবার ব্যঞ্জনা অনুসারে । এখন বিশ্লেষণ করে দেখা যাক , নামকরণ কতটা যথার্থ হয়েছে ।
রমেশ পিতৃশ্রাদ্ধ উপলক্ষ্যে গ্রামে এসেছিল । গ্রামের পরিবেশ , এখানের কূটনীতি , রাজনীতি
সম্পর্কে সে অভিজ্ঞ ছিল না । তাই নানাভাবে পর্যদুস্ত হচ্ছিল । চাষিরা একশো বিঘের মাঠ
ডুবে গেলে কি ক্ষতি হতে পারে তা জানিয়ে ওই বাঁধ কেটে দিতে অনুরোধ করল । বাঁধের গায়ে
একটা জলাশয় আছে তা কেটে দিলে সমস্ত মাছ বেরিয়ে বছরে ২০০ টাকার লোকসান হবে । তাই বেণীমাধব
, রমা কেউই রমেশের পাশে এসে দাঁড়াতে চায়নি । রমেশ বেণীবাবুকে অনুরোধ করে ওই বাঁধ
কেটে দেবার জন্য । কিন্তু বেণী বলে চাষির যত ক্ষতি হবে জামিদারের তত লাভ । ফসল নষ্ট
হলে , চাষি জমি বাঁধা রাখতে তাদের কাছে ছুটে আসবে । তখন চড়া সুদের হার দেখিয়ে ওই
সমস্ত জমি জমিদারদের দখলে চলে আসবে ।
এই সমস্ত প্যাচ রমেশের মধ্যে
ছিল না সে সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে লাঠিয়াল বাহিনীর সামনে দাঁড়ায় । অদ্ভুত দক্ষতায়
কাউকে আঘাত না করেই কাজ হাসিল করে নেয় । কয়েকজন আহত হয় নিজেদের দোষে । লাঠিয়ালরা
ছিল পীরপুরের প্রজা আহত হলেও তারা জানে রমেশ তাদের আঘাত করেনি । এলোমেলো লাঠি চালাতে
গিয়ে তারা আহত হয়েছে তাই বেণীমাধবের কথায় থানায় গিয়ে রমেশের নামে মিথ্যা নালিশ
জানায় নি । রমা তার বাল্যবন্ধুকে সমর্থন না করলেও তার বীরত্বপূর্ণ কাজের প্রশংসা না
করে পারেনি । এইভাবে সমস্ত গল্পটি গ্রামীণ জীবন তার কূটনীতি ও রাজনীতিকে ঘিরে আবর্তিত
হয়েছিল । তৎকালীন গ্রামের সমাজ জীবনের এক সুস্পষ্ট চালচিত্র লেখক পাঠকদের সামনে তুলে
ধরেছেন । তাই ' পল্লীসমাজ ’ নামকরণ যথার্থ হয়েছে ।
---------------------------------------
প্রশ্ন॥ বেণী, রমা ও রমেশ চরিত্র তিনটির
তুলনামূলক আলোচনা করো। সেইসঙ্গে এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে কোন্ চরিত্রটি তোমার
সবথেকে ভালো লেগেছে এবং কেন তা জানাও।
উত্তর ॥>
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত "পল্লীসমাজ' পাঠ্যাংশের তিনটি প্রধান চরিত্র হল বেণী ঘোষাল,
রমা এবং রমেশ।
• বেণী ঘোষাল ॥> বেণী ঘোষালের চরিত্রে মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক জমিদারের
বৈশিষ্ট্যগুলি বর্তমান। সে হৃদয়হীন, রুচিহীন, আত্মসর্বস্ব শোষক জমিদারের
প্রতিচ্ছবি। পূর্বপুরুষের কাছ থেকে যে জমিদারি সে পেয়েছে তাকে যেকোনো উপায়ে
বাড়িয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়াই তার প্রধান লক্ষ্য। দরিদ্র চাষিদের
জন্য তার এতটুকুও সহানুভূতি নেই। উল্টে ধান নষ্ট হলে মহাজনী কারবার ফেঁসে চাষিদের
শোষণ করার আগাম হিসেব সে করতে থাকে। চাষিদের সে ছোটোলোক বলেছে। সে কাপুরুষ,
প্রতিহিংসাপরায়ণ রমেশকে জেলে পাঠাবার জন্য তার নামে থানায়
মিথ্যা নালিশ করতে আকবরকে জোরাজুরি করে। ফলে বেণী
একজন
অমানবিক, অসৎ, লোডী ও কপট চরিত্র
হিসেবেই ধরা দেয়।
• রমা ॥> জমিদার পরিবারের কন্যা,
নাবালক ভাইয়ের অভিভাবক রমা চরিত্রের
নানা রূপ এই স্বল্প পরিসরে গল্পকার এঁকেছেন। নারী হয়েও জমিদারি রক্ষার জন্য যতটা
কঠোর হওয়া প্রয়োজন, রমা ততটাই কঠোর। তবে চাষিদের শস্যের
ক্ষতির জন্য সে জমিদারীর দুশো টাকা ক্ষতি স্বীকার করতে রাজি না হওয়ায় তার
স্বার্থপর চরিত্রেরই প্রকাশ ঘটেছে। রমেশের সঙ্গে কথাবার্তায় তার ব্যক্তিত্বের
পরিচয় পাওয়া যায়। তবে বেণীর থেকে রমা একটু হলেও আলাদা। রমেশ বাঁধ কাটিয়ে দেওয়ায়
মনে মনে সে খুশিই হয়েছে। তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালানো পল্লিগ্রামের নারী রমার
রমেশের প্রতি গোপন অনুভূতিও এই স্বল্প পরিসরে প্রকাশিত হয়েছে।
• রমেশ ॥> জমিদার রমেশ, বেণী ও রমার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রজাদের বিপদের দিনে সে তাদের বন্ধু ও অভিভাবকের মতো পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের মারাত্মক বিপদ থেকে রক্ষা
করেছে। শুধু তাই নয় গ্রামের মানুষের চলাফেরার সুবিধার জন্য পাকা রাস্তা বানিয়ে
দিয়েছে। শোষক জমিদার নয়, তার মধ্যে দয়ালু অভিভাবকের
রূপটি প্রত্যক্ষ করা যায়। রমেশের আচার-ব্যবহার, কর্তব্যবোধ,
যুক্তিবোধ, পৌরুষ, বিষয় অপেক্ষা সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা তাকে অন্যদের থেকে
সম্পূর্ণ আলাদা করেছে। রমেশের রুচিবোধ, ব্যক্তিত্ব,
মানবিক গুণ, অন্যের বিপদের দিনে সর্বস্ব
দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া —এইসব কারণে রমেশের চরিত্রটি আমার ভালো লেগেছে।
১) কাহিনী বিশ্লেষণ করে “পল্লীসমাজ” উপন্যাসের
নামকরণের সার্থকতা বিচার করো ।
২) বেণী, রমা ও রমেশ চরিত্র তিনটির তুলনামূলক আলোচনা করো। সেইসঙ্গে এই তিনটি
চরিত্রের মধ্যে কোন্ চরিত্রটি তোমার সবথেকে ভালো লেগেছে এবং কেন তা জানাও।
৩)
সামাজিক উপন্যাস হিসেবে “পল্লীসমাজ” এর সার্থকতা বিবেচনা করো ।
Comments
Post a Comment